মোঃ আব্দুস সালাম সুজন
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার বাড়িরঘুভাঙ্গা গ্রামের একজন কারুশিল্পী আশুতোষ সূত্রধর। বংশপরম্পরায় কাঠের তৈরি কারুশিল্প তৈরিতে হাতেঘড়ি হয় তার। শুধু কাঠের তৈরি হস্ত শিল্প নয় ঘর তৈরিতেও রয়েছে তার ব্যাপক সুনাম চাহিদা।পরিশ্রম করতে একটুও দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে রাতে কাঠের তৈরি কারুশিল্প বানাতে লেগে যায় সে। ঐহিত্যবাহী কাঠের তৈরি কারুশিল্প তৈরি করতে লাগে বিভিন্ন ধরনের কাঠ। বাজার থেকে বিভিন্ন মাপের কাঠ নিয়ে সেগুলোকে হাতের নিপুন ছোঁয়ায় নিষ্প্রাণ একেকটি কাঠের টুকরোকে করে তোলে জীবন্ত প্রতিরুপ।শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় কাঠের তৈরি হাতি,ঘোড়া, পুতুল,মাছ, হরিন,বাঘ, পাখিসহ বিভিন্ন খেলনা। সেগুলো রোদে শুকিয়ে পালিশ করে রং তুলির আচঁরে প্রানবন্ত ও জীবন্ত রুপে গড়ে তোলাই এ শিল্পীদের কাজ।প্রতিটি কাঠের তৈরি পন্য বানাতে একজন শিল্পীর সময় লেগে যায় ২-৪ দিন। তবে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য এই কাঠের তৈরি কারুশিল্পের পাশা-পাশি ঘর তৈরিতেও ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন এই শিল্পী। নিউজ জাগো সোনারগাঁও ২৪.কম প্রতিনিধির সাথে কথা হয় এই কারুশিল্পী আশুতোষ সূত্রধরের তিনি জানায়, কাঠের তৈরি কারুশিল্পের বর্তমানে তেমন চাহিদা নেই। বর্তমানে কাঠের অনেক দাম হওয়ায় খরচ বেড়ে গেছে তাই অর্ডারও কমে গেছে। এ কাজে সাধারণত শিমুল ও কদম গাছের কাঠ ও নরম জাতীয় কাঠ ব্যবহার করা হয়। পহেলা বৈশাখ আসলে বৈশাখীমেলায় কিছুটা চাহিদা বাড়ে । আর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে তাদের এ পন্যের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তিনি আরও বলেন, বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পেরেছি তাতেই আমরা খুশি। তবে অনেকে এ পেশা থেকে সরে গেছে বলে জানায়, গুটিকয়েকটি পরিবার কাঠের তৈরি এ হস্ত শিল্পের সাথে জড়িত আছে। তবে বাজারে প্লাষ্টিকের তৈরি খেলনার কদর বাড়ায় কাঠের তৈরি হস্ত শিল্পের চাহিদা কমেছে বলে তিনি মনে করেন। তবে পেশা হিসেবে নয় বরং পারিবারিক ঐহিত্য হিসেবে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ লোক কারুশিল্প মেলায় নিয়মিত প্রদর্শনী হয় তার কারুপন্য। এছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারশিল্প মেলা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারুশিল্প প্রদর্শনী, গোপলগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মেলায়সহ অনেক স্থানেই তার এই বিখ্যাত হস্ত শিল্পের প্রদর্শনী করা হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন কর্তৃক আয়োজিত মেলায় বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠ কারুরতœ পুরুষ্কারে ভূষিত হন গুনী এই শিল্পী। এছাড়াও দেশের গন্ডী পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আশুতোষ সূত্রধরের রয়েছে অনেক সুনাম। ২০১৪ সালে সার্ক হ্যান্ডক্রাফট এক্সিবিশন নেপালের কাঠমুন্ডতে অংশগ্রহন করে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পীর পুরুষ্কার পান তিনি।এছাড়াও জাপানে অনুষ্ঠিত সার্কভূক্ত দেশের কারুশিল্পীদের হয়ে উড ক্রাফট বিভাগেও শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ছাড়াও এ পেশায় জড়িত আছেন সোনারগাওঁ ভট্টপুর গ্রামের আরেক গুনী কারুশিল্পী বিরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর। দুজনইে দেশের সুনাম বয়ে এনেছে। এছাড়াও নেপাল ,ভুটান ভারতসহ বেশ কয়েকটি সার্কভুক্ত দেশে তাদের নির্মিত হস্ত শিল্পের প্রদর্শনী ও বিপনন করে দেশের সুনাম বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দেন। পুরষ্কার হিসেবে প্রত্যেকে পান দুই লক্ষ টাকাসহ ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট। তাদের তৈরি কারুপণ্যের ন্যায্য মুল্য দেশে না পেলেও বিদেশে গিয়ে দেশের তৈরি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরে অনেক খুশি এ কারুশিল্প শিল্পীরা। তাদের এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সুদবিহীন ঋণ পেলে আরও ব্যাপকভাবে এ শিল্পের প্রসার ও বিপণনে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন তারা । তাই দূর্লভ এ শিল্প ও শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী এই কাঠের তৈরি শিল্পকে এবং পেশায় নিয়োজিত শিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাশে থাকতে হবে। তাহলেই এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে, তা না হলে বিলুপ্তি পথে চলে যাবে কাঠের তৈরি ঐহিত্যবাহী শিল্প।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ নিউজ জাগো সোনারগাঁও ২৪
Leave a Reply