হেলথ ডেস্ক
রমজান মাস চলছে। আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক সব মুসলমান এই রমজানের সবগুলো রোজা রেখে মুসলমান হিসাবে একটি ফরজ কাজ পূর্ণ করতে চাই, আর এভাবে নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে চাই। রমজানমাসব্যাপী নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত জামাতের সাথে নামাজ পড়া, কুরআন তিলয়াত করা, রোজা রাখা, তারাবি পড়া, দৈনন্দিন আরও কিছু ইবাদত করা, আর নিজের কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য চাই সুস্থ শরীর ও সুস্থ মন। মাস ব্যাপী সুস্থ থাকতে রোজাদারের খাবারের প্রতি অবশ্যই সাবধানী হতে হবে। তা না হলে শারীরিক বা মানসিক বিপর্যয়ের কারনে রোজা নষ্ট হয়ে হতে পারে। তাই জেনে নেই ইফতার সেহরিতে রোজাদার কি খাবে, কিভাবে খাবে?
ইফতারি শুরু করা উচিত এক গ্লাস পানি দিয়ে। ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে। কৃত্রিম শরবতের চেয়ে লেবুর শরবত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পারলে ইসবগুলের ভুসি দিয়ে বানানো শরবত খেতে পারেন। এক গ্লাসের বেশি শরবত না খাওয়াই ভালো। দু একটি খেজুর অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে এমনকি ডায়াবেটিস রোগীরা একটি বা দুটি খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে কম। ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলে কম মিষ্টি যুক্ত খেজুর সংগ্রহ করতে পারেন। আলজেরিয়া থেকে আমাদের দেশে যেসব খেজুর আসে সেগুলোর মিষ্টি অনেক কম। শসা বা ক্ষিরা খাওয়া যেতে পারে যেহেতু এখন পর্যন্ত এর মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়নি। তরমুজ খেতে চাইলে সাবধানে খেতে হবে। কারণ তরমুজ টকটকে লাল রং করার জন্য অভিনব উপায়ে রঙিন রাসায়নিক পদার্থ তরমুজে প্রবেশ করানো হয়। তাই তরমুজ কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তবে এবার গত বছরের মতো তরমুজের তেমন চাহিদা থাকবে না বলে অনেকে মনে করছে। এবার তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকাতে তরমুজের চাহিদা কম থাকবে। আর তরমুজ আসতে ও কিছুটাসময় লাগবে।
আমরা কখনোই পেট ভরে ইফতারি করবো না। পেট ভরে ইফতারি করলে পেটের সমস্যা ছাড়াও নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদত করতে সমস্যা হতে পারে। অনেক সুস্থ মানুষ এমনভাবে ইফতার করেন যে, পরের দিন ইফতার পর্যন্ত ক্ষুধা লাগার কথা নয়। এভাবে খাবার গ্রহণ রোজার আদর্শ বিরোধী। মনে রাখতে হবে রোজার মাসে সব কিছুর মাঝে সংযম থাকতে হবে। ইফতারির সময় রেস্টুরেন্ট এবং ফুটপাথে যে সব শরবত বিক্রি করা হয় তাতে বরফ মেশানো হয় যা মূলত সরবরাহ করা হয় মাছের জন্য ব্যবহৃত বরফ এমন কি মৃত মানুষ সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত বরফ থেকে। মাঝে মাঝে ছোট খাটো কারখানা থেকে নদীর দূষিত পানি দিয়ে বরফ তৈরি করে তা বাজারে সরবরাহ করা হয়। শুধুমাত্র ইফতারির শরবত নয় বরং রমজান মাসে কেনাকাটা করার সময় মেয়েরা বিশেষ করে লাচ্ছি এবং ফালুদা খাবেই। লাচ্ছি এবং ফালুদাতে ও একইভাবে বরফ মেশানো হয়ে থাকে যা কখনো কারো কাম্য হতে পারে না। অথচ আপনি বাসায় সহজেই বিশুদ্ধ পানি দিয়ে এ বরফ তৈরি করতে পারেন। বাংলাদেশে একমাত্র ফাইভ স্টার হোটেল ছাড়া সম্ভবত কোথাও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে বরফ তৈরি করা হয় না। অপ্রিয় হলেও সত্য একটু সাবধানে সব কিছু দেখে শুনে খেতে হবে।
আমাদের দেশে ইফতারিতে মুড়ি না হলে চলে? ইফতারির একটি অপরিহার্য অংশ মুড়ি। মুড়ি, ছোলা, পিঁয়াজু, ঘুগনি, জিলাপি, ধনেপাতা সবকিছু এক করে মিশিয়ে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়ার মাঝে এক অন্য ধরনের আনন্দ রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুড়িকে বড় এবং সাদা করার জন্য ইউরিয়া মিশানো হয়ে থাকে। ইউরিয়া মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইউরিয়া হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ইউরিয়েজ এনজাইম মানবদেহে না থাকার জন্য মানুষ ইউরিয়া হজম করতে পারে না এবং ইউরিয়া দেহের অভ্যন্তরে থেকে যায়। ইউরিয়া খেলে এসিডিটির সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন জটিলতা সহ মৃত্যু পর্যন্ত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মুড়ি খেতে হবে রয়ে সয়ে এবং দেখেশুনে। সাদা মুড়ি বর্জন করে হাতে ভাজা মুড়ি খেতে হবে।এছাড়াও ইফতারে রাখতে পারেন দেশী ফল পেঁপে,পেয়ারা, বরই, আনারস প্রভূতি ফল।
রমজান মাসে কেউ যদি সেহেরী খেতে হোটেলে যেতে বাধ্য হন তাহলে ভাতের সাথে মুরগির মাংস না খাওয়াই ভালো। ঢাকা শহরের অধিকাংশ হোটেলে ভালো মুরগির সাথে মরা মুরগিও রান্না করা হয়। মাঝে মাঝে কিছু অভিযান চললেও সেটি আমাদের জাতীয় চরিত্রে কোনো পরিবর্তন ঘটায় না। তাই হোটেলে একান্ত খেতেই হলে মুরগির পরিবর্তে মাছ খাওয়াই উত্তম। সেহরিতে বেশি মসলা এবং লবণযুক্ত খাবার খাবেন না। এসব খাবার রোজা রাখা অবস্থায় পিপাসা বাড়িয়ে দেয়।
কিডনি রোগীরা যদি রোজা রাখেন তাহলে ইফতারের সময় ডালের তৈরি কোনো ইফতার সামগ্রী গ্রহণ করবেন না। বেগুনি না খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন রঙিন জিলাপি খাবেন না। রঙিন জিলাপিতে কৃত্রিম রং মেশানো থাকে। এটি আপনার কিডনির অবস্থা আরো খারাপ করে ফেলবে। শুধু তাই নয় কৃত্রিম রং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হালিম খাওয়া আপনার জন্য বিষের মতো। ইফতারের সময় কিডনি রোগীরা শুধুমাত্র পানি দিয়ে ইফতার শুরু করবেন। ফলের মধ্যে আপেল, নাশপাতি খাবেন। দু একটি খেজুর খেতে পারেন। পালং শাক, পুঁইশাক অথবা অন্য কোনো শাকের পাকুড়া খাবেন না। কাবাব জাতীয় খাবার খাবেন না। সামান্য ইফতার করে নামাজ পড়ার পর আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক রাতের খাবার খেয়ে নিবেন। তরকারী হিসাবে চিচিঙ্গা, ধুন্দুল এবং লাউ খেতে পারেন।
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ নিউজ জাগো সোনারগাঁও ২৪
Leave a Reply